ভোক্তা হিসেবে আপনার অধিকার।

ভোক্তা হিসেবে আপনার অধিকার


কোনো হোটেল বা রেস্তোরাঁয় খেতে গেলেন। খাওয়ার সময় আপনার কাছে মনে হলো খাবারটি বাসি বা পচা কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ। আপনি তাৎক্ষণিক হোটেল বা রেস্তোরাঁর কর্তৃপক্ষকে জানালেন বিষয়টি। কিন্তু তারা পাত্তা দিল না অভিযোগটির। উল্টো দাম দিয়ে কেটে পড়ার জন্য বলল। কিন্তু এত দাম দিয়ে খাবার খেতে এলেন তা কি আর এমনি এমনি ছেড়ে দেবেন? কিন্তু মনে মনে ভাবতে লাগলেন কীই-বা করার আছে আপনার? কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না যে এ ধরনের অভিযোগের প্রতিকার পাওয়ার ব্যবস্থা আছে। শুধু পচা, বাসি বা ভেজাল খাবারের জন্য নয় বরং ভোক্তা হিসেবে আপনি যেকোনো ক্ষেত্রে প্রতারণার শিকার হলে বা ঠকে গেলে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। শুধু তা-ই নয়, প্রতিকারের পাশাপাশি আপনি পাবেন ক্ষতিপূরণও।



যেসব কারণে আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ অনুযায়ী বিক্রেতার পণ্যের মোড়ক ব্যবহার না করা, মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করা, সেবার তালিকা সংরক্ষণ ও প্রদর্শন না করা, অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রয় করা, পণ্য মজুত করা, ভেজাল পণ্য বিক্রয়, খাদ্যপণ্যে নিষিদ্ধ দ্রব্যের মিশ্রণ, অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন, মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা প্রতারণা, প্রতিশ্রুত পণ্য সরবরাহ না করা, ওজনে ও পরিমাপে কারচুপি, দৈর্ঘ্য পরিমাপের ক্ষেত্রে গজ ফিতায় কারচুপি, নকল পণ্য প্রস্তুত, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রয়, অবহেলা প্রভৃতি কারণে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।



কীভাবে নেবেন আইনের আশ্রয়

ভোক্তার অধিকার রক্ষার জন্য রয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ অধিদপ্তরটি কারওয়ান বাজারের টিসিবি ভবনে অবস্থিত। আপনি যেকোনো ÿক্ষেত্রে ভোক্তা হিসেবে ক্ষতির শিকার হলে কারণ উদ্ভব হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে অপরাধটি সম্পর্কে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কিংবা অধিদপ্তরের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করতে হবে। এতে আপনার নাম, মা ও বাবার নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, ফ্যাক্স ও ই-মেইল (যদি থাকে) উল্লেখ করে দিতে হবে। অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট www.dncrp.g.bd থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন। ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন না করলে অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হবে না। অবশ্যই আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, এই আইনের অধীনে আদালতে সরাসরি কোনো মামলা যায় না।

আপনার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তা অধিদপ্তর তদন্ত সাপেক্ষেÿমামলা করতে পারবে। প্রথম তদন্তেও যদি প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে অভিযোগকারী এবং যার বিরুদ্ধে অভিযোগ উভয়কে শুনানিতে ডাকা হবে। শুনানির পরিপ্রেক্ষিতে এবং অভিযোগের তদন্ত শেষে যদি অভিযোগের প্রমাণ মেলে, তাহলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জরিমানা প্রদানের আদেশ দেবে অধিদপ্তর। এ জরিমানা হিসেবে যে টাকা আদায় করা হবে, তার ২৫ শতাংশ টাকাÿক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তাকে দেওয়া হবে। এ ছাড়া জরিমানা ছাড়াও ব্যবসার লাইসেন্স বাতিল, ব্যবসায়িক কার্যক্রম সাময়িক বা স্থায়ীভাবে স্থগিতও করতে পারে অধিদপ্তর। যেসব জেলায় অধিদপ্তরের শাখা নেই, সেসব জেলায় এই আইনে মহাপরিচালককে যে ক্ষমতা দেওয়া আছে, তা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর ন্যস্ত থাকবে।

অধিদপ্তর অভিযোগটি গুরুতর মনে করলে অভিযোগ দায়েরের ৯০ দিনের মধ্যে অভিযোগপত্র প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দাখিল করতে পারে। ম্যাজিস্ট্রেটের রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে ৬০ দিনের মধ্যে দায়রা জজের আদালতে আপিল করা যাবে। ভোক্তার ক্ষতি যদি আর্থিক মূল্যে নিরূপণযোগ্য হয়, তবে ক্ষতিপূরণ দাবি করেও যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা করার সুযোগ আছে। আদালত ক্ষতিপূরণ প্রদান ছাড়াও পণ্যের প্রতিস্থাপন বা ফেরত দিয়ে পণ্যের দাম ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন।

লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

Comments

Popular posts from this blog

দাদ-হাজা-চুলকানির চোটে জেরবার? এগুলো সারিয়ে তুলুন এই ৮ টি ঘরোয়া পদ্ধতি Dada-Haza-itchana small to save? Correct these 8 domestic methods.

Imgamma - Download V2 - PIN (CH)

চিকুনগুনিয়া তো সেরেছে কিন্তু ব্যথা সারেনি।কি করবেন? Chikunagunya fever is good but pain is not good. What will you do?